শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪
ঢাকা শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর, ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১
The Daily Post

বরিশালের অধিকাংশ খাল যেন ময়লার ভাগাড় 

বরিশাল ব্যুরো 

বরিশালের অধিকাংশ খাল যেন ময়লার ভাগাড় 

কীর্তনখোলা নদীর মোহনা ছুঁয়ে নগরীর মধ্যে প্রবেশ করা খালগুলোর বেশিরভাগই হয় দখল নয় ভরাট হয়েছে প্রভাবশালীদের মদদে। হাতেগোনা যে কয়টি এখনো টিকে আছে তারমধ্যে পোর্ট রোড ফলপট্টি হয়ে জেলখালটি কোনভাবে বেঁচে আছে। 

যদিও একটু এগিয়ে চকবাজার ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে দুপাশে দৃষ্টি দিলে দেখা যায় খাল নয়, এটি যেন ভাগাড় খানা। খালের দুপাশেই ময়লা আবর্জনা ও হাঁস মুরগীর নাড়িভূড়ি ফেলে রীতিমতো চর বানিয়ে দেয়া হয়েছে খালের মধ্যে। 

এই অংশের জেলখাল পুনরুদ্ধারে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ কখনো চোখে পড়েনি বরং স্থানীয় প্রভাবশালীর চেষ্টায় বাধা দিয়েছে বলে জানালেন এলাকাবাসী। 

তাদের দাবি, নতুন মেয়রকে এই অংশের খাল পুনরুদ্ধারে ভোগান্তি পোহাতে হবে তা নিশ্চিত। কেননা অনেকাংশে বেদখল ও ময়লা আবর্জনায় পায়ে চলা পথ তৈরি হয়েছে খালের দুপাশে। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, পৌরসভা থেকে সিটি করপোরেশনে উন্নিত হবার পর থেকে নগরীর সীমা বেড়েছে এবং বেড়েছে বাড়িঘর। কিন্তু একটি বাড়িঘর বা সড়কও পরিকল্পিত নয় বলে দাবি নগর চিন্তাবিদদের। তাদের মতে সিটি করপোরেশনের প্রতিটি পরিষদই খাল ভরাটের জন্য দায়ী।

খালের উপর সড়ক বানানো, খাল বন্ধ করে ড্রেন বানানো এগুলো করেছিলেন তারা। অন্যদিকে বরিশাল নগরীর বেশিরভাগ ড্রেনেজ ব্যবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এর ব্যবহার উপযোগিতা নেই বললেই চলে। অনেকটা অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে এবং অপরিকল্পিতভাবে জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য তৈরি করা হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। 

কোন কোন ক্ষেত্রে মাস্টার ড্রেনের সাথে প্রাইমারি ড্রেনের সংযোগ নেই, থাকলেও তলদেশের উচ্চতার পার্থক্য থাকায় পানি নিষ্কাশন হয় না। নবগ্রাম রোডের খাল ভরাট করে বটতলায় তিনতলা মার্কেট নির্মাণ নগরীর জন্য আত্মঘাতী হয়েছে বলে মনে করেন তারা। জোয়ারের পানি এবং বৃষ্টিতে এখানে সবার আগে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। 

খালের উপরের ব্রিজ ভেঙে কালভার্ট নির্মাণ করায় পানির স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া ড্রেন এবং খাল নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, পরিচ্ছন্ন না করারও একাধিক অভিযোগ সিটি করপোরেশন কর্মীদের বিরুদ্ধে। নগরীর মধ্যে এক সময় ২৩টি খাল এবং ২৪টি সংযোগ খাল প্রবাহিত হতো বলে জানা যায়। 

যার বেশিরভাগ খালের অস্তিত্ব নেই। কোন কোন ক্ষেত্রে ছোট ছোট ড্রেন বানানো হয়েছে। যে ২২/২৩ টি খালের কথা বলা হয় সেগুলো দখল, দূষণ এবং নাগরিকদের অপরিণামদর্শী আচরণের কারণে অস্তিত্বহীন। মাত্র ৩/৪ টি খালে কোনরকম জোয়ার ভাটা হয়। খালের উপরে-নীচে অপচনশীল বর্জ্য বিশেষত প্লাস্টিক এবং পলিথিনের পুরু স্তর জমা এবং দুই পাড়ের বাসিন্দাদের দখলের কারণে পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়া এবং সুয়ারেজ সংযোগের কারণে এসব খালের ব্যবহার উপযোগিতা নেই বলে জানান নগর চিন্তাবিদদের একজন কাজী মিজানুর রহমান। 

তিনি বলেন, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে খালগুলো কোন ভূমিকা রাখতে পারছে না। অথচ এক সময় জেলখাল, নবগ্রাম খাল, সাগরদী খালে স্রোত ছিল। নালাগুলো বেয়ে পানি খালে পড়তো। বড় বড় নৌকা মালামাল পরিবহন, গয়না যাত্রী নিয়ে আসা যাওয়া করতো। খালে মাছ ধরে অনেকে জীবিকা নির্বাহ করতো যা সবই এখন ইতিহাস। 

নবগ্রাম খালটি এখন বটতলা এলাকার পাকা ড্রেন। নবীন প্রজন্মের কাছে মনে হবে এগুলো শুধুই গল্প। বছর ২/৩ আগে একবার বরিশাল সিটি করপোরেশন নিজস্ব কর্মী এবং অর্থায়নে জেলখাল, সাগরদী খাল পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করেছিল। অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, জেল খাল থেকে উঠে এসেছে শতমণ পলিথিন আর প্লাস্টিক বর্জ্য। 

যা এখন জেলখাল ও সাগরদি খালে স্পষ্ট দৃশ্যমান। এই ময়লা আবর্জনার কারণেই আজ বরিশালে কোনো খাল আর অবশিষ্ট নেই বলে জানালেন পরিবেশ আন্দোলনের নেতা এনায়েত হোসেন শিবলু। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় স্থানীয় এমপি পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক কথা দিয়েছিলেন, নির্বাচন শেষ হলে অল্প সময়ের মধ্যে খালগুলো পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি কোনো পদক্ষেপই নিতে পারেননি অন্য পক্ষের বাধার কারণে। 

অর্থনীতি সমিতির সভাপতি কাজী মিজানুর রহমান বলেন, প্রশাসনের গাফিলতি আছে তা অস্বীকার করবো না, তবে সবচেয়ে বেশি দায়ী আমরাই। আমাদের বাসাবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হোটেল রেস্টুরেন্ট, বাজার সবকিছুর বর্জ্য আমরা খালে কিম্বা নদীতে ফেলছি।  প্রতিটি ড্রেন আটকে আছে প্লাস্টিক বর্জ্যে। নদীতে দেখুন, ভাসছে প্লাস্টিকের বোতল। 

কাজী মিজানুর রহমান আরো বলেন, নগরবাসীকে সচেতন করার পাশাপাশি তাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে হবে। প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় নির্দিষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থা থাকতে হবে, যেখানে সবাই সারাদিনের ময়লা আবর্জনা এনে ফেলবে এবং রাতে তা পরিষ্কার করে নেবে সিটি করপোরেশন। 

নগরীর ময়লা আবর্জনা সিটি করপোরেশন নিয়মিত পরিষ্কার করছে বলে জানান বরিশাল সিটি করপোরেশনের সিইও ফারুক আহম্মেদ। তিনি বলেন, নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থায় কোথাও কোনো অনিয়ম নেই। খালগুলো পুনরুদ্ধারের বরাদ্দ না থাকায় কিছু করা যাচ্ছে না।

টিএইচ